কালনেত্র ডেস্ক: সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রোববার (১৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের ভূমিকা নীতিমালার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। মাঠপর্যায়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা আমাদের নেই, তবে আমরা সবসময় প্রশাসনকে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ফিল্ডে গিয়েছিলাম শুধু একটা বার্তা দেওয়ার জন্য—যারা লুটপাট করছে, তারা যেন বুঝতে পারে সরকার নীরব নয়। গত এক-দুই দশকে কোনো মন্ত্রীকে কি এমন ঘটনাস্থলে যেতে দেখেছেন? কোনো মন্ত্রীকে এভাবে আক্রান্ত হতে দেখেছেন?”
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান দাবি করেন, “প্রশাসন হয়তো চুপ থেকেছে বা লুটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা বা সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “নীতিগতভাবে আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে নির্দিষ্ট ১৭টি এলাকায় পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ। এখন মাঠপর্যায়ের দায়িত্ব হচ্ছে সেই নীতিমালার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। আমরা বারবার তাদের জানিয়েছি, লিখিতভাবে জানিয়েছি, কিন্তু কাজের কাজ তারা করেনি।”
“যখন দেখলাম, প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না, তখন আমরা উপদেষ্টারা মাঠে গিয়েছিলাম সাহস ও বার্তা দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের গাড়ি ঘিরে অশ্লীল আচরণ করা হলো। এরপর একটা রাজনৈতিক দলও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হলো। এটাই প্রমাণ করে—যদি তখনই জোরালো প্রতিবাদ না হতো, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত।”
তিনি বলেন, “দেরিতে হলেও মানুষ আজ সোচ্চার হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের কারণেই এখন লুটেরা চক্র সাবধান হচ্ছে। ভবিষ্যতে পাথর লুটের আগে তাদের দুইবার ভাবতে হবে।”
উপদেষ্টা হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “পাথর কে তুললো, কতটা তুললো—সেটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। কিন্তু একজন সচেতন নাগরিক এবং পরিবেশকর্মী হিসেবে আমি দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত, তবে লুটের দায় পুরোপুরি আমাদের ওপর চাপানো অনুচিত।”
তিনি আরও বলেন, “যারা দোষী, তাদের সত্যিকার তালিকা হচ্ছে কিনা, মামলাগুলো কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটিও এখন আমাদের দেখার বিষয়। আমাদের ফিল্ডে যাওয়ার পরেই তিন দিন ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হয়েছিল পাথর ভাঙার মেশিনের। কিন্তু কয়েকদিন পর রাজনৈতিক চাপ শুরু হলো—যাতে আবার পাথর উত্তোলনের দাবি উঠল।”
“২০২০ সালে যখন পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়, তখনও ধর্মঘট দিয়ে চাপ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়টাও আমরা পেরিয়ে এসেছি। এবারও পেরোব, যদি জনগণ তাদের অবস্থানে অটল থাকে।”
উপসংহারে তিনি বলেন, “আজ জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছে—যদি মানুষ একজোট হয়, তবে রাজনৈতিক সমর্থন থাকলেও লুটেরা চক্রের টিকে থাকা সম্ভব নয়।”
দ.ক.সিআর.২৫