কালনেত্র প্রতিবেদন: বনের গাছ কাটা এবং ভাটিতে বালু উত্তোলন। এর ওপর অতিমাত্রায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল। এসব কারণে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রামগঙ্গা সড়কে কয়েক দফা ভূমিধস ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মৌসুমের শুরুতে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আবার কয়েক দফা রামগঙ্গা সড়কে ভাঙন দেখা দেয়।
সম্প্রতি পুরতন ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সাতছড়ি উদ্যানের প্রবেশের আগে রামগঙ্গা ছড়ার পাশ ঘেষে যাওয়া মহাসড়কটি বালিমাটির কারণে টিলার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে টানা বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ের অভ্যন্তরে চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। চিরসবুজ এবং রেইন ফরেস্ট নামে খ্যাত সাতটি ছড়ার মিলন এখন আর দেখা যায় না। ছড়াগুলো গতি পরিবর্তন করে যে দিকে নিচু এবং মাটি নরম পাচ্ছে সেদিকে ভাঙছে।
একই সঙ্গে উদ্যানের উজান ও ভাটিতে চা বাগান এবং বাইরে বিভিন্ন নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে পাহাড়ের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ভাটিতে পানি নামার সময় পানির সঙ্গে বালুসহ সব কিছু ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। এতে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। উদ্যানের আট কিলোমিটারের মধ্যে সুতাং নদী থেকে এবং তেলিয়াপাড়া এলাকায় চা বাগানসহ বিভিন্ন ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। এ অবস্থায় পানির সঙ্গে পাহাড়ের মাটি গিয়ে বালু নেওয়া গর্ত ভরাট হচ্ছে। পাহাড় ধসের আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে অবাধে গাছপালা কাটা। উদ্যানসহ পাহাড়ের ভেতর থেকে গত ১০-১২ বছরে অবাধে গাছ কাটা হচ্ছে। বন বিভাগ এবং প্রভাবশালীদের ইন্ধনে এসব গাছ পাচার হচ্ছে। এর ফলে পাহাড় তার রূপ হারাচ্ছে।
চুনারুঘাট থেকে সাতছড়ি হয়ে তেলিয়াপাড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার পুরনো মহাসড়কের পাশে অসংখ্য ভাঙন দেখা দিয়েছে। মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে চুনারুঘাট থেকে তেলিয়াপাড়া সড়ক। এরই মধ্যে গত বছর এবং চলতি বছর কয়েক দফা রামগঙ্গা সেতু, চণ্ডিছড়া সেতু এবং পুরনো মহাসড়ক ভেঙেছে। দুবার সেতু ভাঙার কারণে ওই সড়কে প্রায় দুই মাস যান চলাচল বন্ধ ছিল।
বন বিভাগ এবং সহব্যবস্থাপনা কমিটি বিগত কয়েক বছর আগে ক্রেল প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে ছিল। কাজ শুরুর পর থেকে কয়েক দফা বৃষ্টি এবং ঢলের পানিতে কাজের অনেক অংশ তলিয়ে যায়। এ অবস্থায় পুরো কাজ করাও দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। পাহাড় ও সড়কের এ ভাঙন রক্ষা করতে না পারলে যোগাযোগ এবং বন্যপ্রাণীসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিপন্ন হবে।
ভাঙনের ফলে রামগঙ্গায় বসবাসকারী চা পল্লীর লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত বছর ভাঙনের ফলে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভেঙে যায়। পরে সরকারিভাবে কোনো সংস্কার করা না হলেও ব্যক্তি উদ্যোগে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সেখানে বাঁশ দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেন।
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এই বন দেশের পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর অভয়াশ্রম। কিন্তু অবাধে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে বন ও সড়ক এখন হুমকির মুখে। সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে এই বন একসময় হারিয়ে যেতে পারে।
তাছাড়া ‘জলবায়ু ও পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি হয়। কয়েক দিনে যে পরিমাণ বৃষ্টির পানি হয় আগে তেমন হতো না। এই পরিবর্তনের জন্য আমরাই দায়ী। কারণ, আমরা পরিবেশ নষ্ট করেছি। এখন যদি এ বিষয়ে সচেতন না হয়ে গাছ কাটা এবং বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
দ.ক.সিআর.২৫