কালনেত্র প্রতিবেদন
প্যারেন্টিং বা অভিভাবকত্ব মানেই শুধু সন্তানকে বড় করে তোলা নয়, বরং তাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এক নিরবিচার সংগ্রাম। যুগের পর যুগ ধরে প্যারেন্টিংয়ের রীতিনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। আগের দিনে শিশুকে শাসন আর অনুশাসন দিয়ে ‘ভদ্র’ বানানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু আজকের বিশ্ব অনেক বেশি গতিময়, প্রযুক্তিনির্ভর ও মনস্তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জে ভরা। সেই সঙ্গে বদলে গেছে প্যারেন্টিংয়ের ধরণও—এখন দরকার ‘আধুনিক প্যারেন্টিং’।
আধুনিক প্যারেন্টিং মানে শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, তার আবেগ ও চিন্তাকে গুরুত্ব দেওয়া, এবং তাকে স্বাধীনভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে, ভুল থেকে শেখার সুযোগ পায় এবং নিজের সমস্যার সমাধান নিজেই খুঁজে বের করার সক্ষমতা তৈরি হয়।
প্রযুক্তির প্রসার যেমন শিশুদের শেখার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, তেমনি এনে দিয়েছে আসক্তি, তথ্যের জটলা এবং মানসিক চাপের মতো সমস্যা। তাই অভিভাবকদের এখন শুধুই ‘না’ বলা যথেষ্ট নয়; বরং শিশু কী দেখছে, কী ভাবছে, কেন এমন করছে—এসব বোঝার জন্য সময় দিতে হবে, মনোযোগ দিতে হবে।
আধুনিক প্যারেন্টিংয়ে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, ধর্মীয় শিক্ষা, যৌনশিক্ষা, নৈতিকতা ও সামাজিক আচরণ শেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, তাদের প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত রাখা, বই পড়ায় আগ্রহী করা এবং খেলাধুলার সুযোগ দেওয়াও প্রয়োজন।
সবচেয়ে বড় কথা, পিতামাতা যদি নিজের আচরণে সততা, সহনশীলতা ও দয়া প্রদর্শন করেন, তাহলে সন্তানরাও তা অনুসরণ করবে। কারণ সন্তান শেখে দেখে, শুনে এবং অনুভব করে।
সবশেষে বলবো, আধুনিক প্যারেন্টিং মানে প্রযুক্তির যুগে মানবিক ও দায়িত্বশীল মানুষ তৈরি করা। সন্তানকে শুধু বড় নয়, যথার্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সময়, সচেতনতা ও ভালোবাসার গভীর সংমিশ্রণ।
দ.ক.সিআর.২৫