➖
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
অসহায়, অস্বচ্ছল ও দুস্থ্য সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি অনুদান বিতরণ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। কারণ নিজেদের ‘অস্বচ্ছল’ পরিচয়ে দিয়ে যারা এই অনুদান নিয়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই আর্থিকভাবে সচ্ছল।
গত ৯ ই জুন, ২০২৫ ইং সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় জেলার ২১ জন সাংবাদিকদের মোট ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হলে ও অনেকেই স্বচ্ছল অবস্থায় রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
তালিকার এক নাম্বারে থাকা বিটিভি থেকে চাকরিচ্যুত প্রবীণ সাংবাদিক জনাব মোহাম্মদ আরজু ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার একজন কর্মকর্তা।
বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে প্রচুর বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে ৷
দৈনিক ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধি কাজি খ আ ম রশিদুল ইসলাম একজন রেজিস্টার্ড কাজী। শহরের পুনিয়াউটে নিজস্ব পৈত্রিক ভিটায় ঝকঝকে তকতকে বাড়ি রয়েছে তার। প্রতি মাসে বিভিন্ন ভাবে ভালোই আয় করেন বলে জানা যায়। ছেলেরা প্রবাসী।
মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি আ ফ ম কাউসার এমরান শহরের পৈরতলায় তিনতলা বাড়ির মালিক। তিনি পারিবারিক ভাবেই বিত্ত বৈভবের মালিক।
অভিজাত ভবনে ভাড়া থাকেন এশিয়ান টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান পারভেজ। তার স্ত্রী সাবেক এমপি রবিউলের প্রতিষ্ঠা করা স্কুলের শিক্ষিকা এবং ছিলেন রবিউলের স্ত্রী ফাহিমা খাতুনের ঘনিষ্ঠ সহচর৷
অনেক বছর ধরে কম্পিউটার ব্যবসা করছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন বেলাল। তার বৈধ এবং অবৈধ (নাম্বার বিহীন) একাধিক সিএনজি চালিত অটোরিকশা রয়েছে বলে জানা যায়৷ সেগুলো থেকে প্রতিদিন ভালোই আয় হয়।
এখন টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি আজিজুল সঞ্চয় এর বাবা প্রবাসী। প্রবাসের আয়ে অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিক ছাড়াও উত্তরাধিকার সূত্রে বিপুল সম্পদের মালিক। কথিত আছে, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি।
আরটিভির জেলা প্রতিনিধি আজিজুর রহমান পায়েল, দৈনিক দেশ কালের আখাউড়া প্রতিনিধি আশিষ সাহা এবং দৈনিক মানব জমিন, নবীনগর প্রতিনিধি শ্যামা প্রসাদ সাহাও স্বচ্ছতার সঙ্গে দিনাতিপাত করেন। এরা মিথ্যে তথ্য দিয়ে এই অনুদান হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা যায়।
অনুদান প্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজন প্রকৃতই অসুস্থতা ও বেকারত্বের কারণে পারিবার নিয়ে কষ্টের মধ্যেই আছেন তবে উপরোক্ত ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীদের আর্থিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদনের দায়িত্ব জেলা তথ্য কর্মকর্তার। তবে এবারের ঘটনায় সেই যাচাই-বাছাই আদৌ হয়েছে কি না, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।
"যদি সঠিকভাবে যাচাই করা হতো, তাহলে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলরা কখনোই এই তালিকায় থাকতেন না," বলে মত দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক সাংবাদিক। এই ঘটনায় জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। অনেকেই এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এতে আরো দায়ি করা হচ্ছে বর্তমান প্রেসক্লাব সভাপতি সেক্রেটারি সহ সাংবাদিক নেতাদের। এরা সবকিছু জেনেও মুখে কুলুপ এঁটে অনুষ্ঠান মঞ্চে বসে বসে মজা দেখেছে৷ বলা হচ্ছে, সচ্ছল সাংবাদিকেরা নিজেদেরকে 'অসচ্ছল' পরিচয় দিয়ে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে প্রকৃত অসচ্ছলদের জন্য বরাদ্দ দেয়া সরকারি এই অনুদান তছরুপ করেছেন যা জেনে বুঝেও এর বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে উল্টো ভাগবাটোয়ারা করতে অনুদান প্রাপ্তিতে সাহায্য করেছেন প্রেসক্লাবের সভাপতি বিজন এবং সেক্রেটারি বাহারেরা।
দ.ক.সিআর.২৫