নাহিদ মিয়া মাধবপুর প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার রেললাইন ঘেঁষা ভূমিতে বসবাস করা অর্ধশত পরিবারকে কোন পূর্ব নোটিশ ছাড়াই বাড়ি ঘর উচ্ছেদ করে ৭ একর ভূমি জনৈক ব্যক্তিকে দখল বুঝিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এতে করে ওই পরিবারগুলোর নারী ও শিশুদের মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে রেললাইনের পাশে।
গত বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ আদালতের নির্দেশে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায় ভূমির মালিকানা জেলা প্রশাসক ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই এলাকার আয়মনা খাতুন ১৯৮৪ সালে তার বাবার নামে দলিল সূত্রে মালিক দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে তাদের দখল দেয়া হয়েছে বলে আয়মনা খাতুনের ছেলে কামরুজ্জামান কামাল দাবি করছেন। ওই দিন গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে শাহজীবাজার প্রগতি কিন্ডারগার্টেন নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া।
আজ শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায় পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে প্রচন্ড রোদে এপাশ ওপাশ ঘুরাফেরা করছে। অনেক পরিবার না খেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন উচ্ছেদের সময় আয়মনা খাতুনের ছেলেরা শত শত লোক নিয়ে তাদের বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানান, তারা রেলওয়ের পাশে প্রায় ৩০/৪০ বছর যাবত বসবাস করছেন। বৃহস্পতিবার পুলিশ সহ বেশ কয়েকজন লোক এসে তাদের ঘরগুলো গুড়িয়ে দেয়। আসাদ নামে এক ব্যাক্তি নাকি এই জায়গার মালিক, তিনি নাকি মামলা করে এই জায়গা পেয়েছেন। কিন্ত তাদের কে এখান থেকে উচ্ছেদ করার জন্য কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি।
এডভোকেট নজরুল ইসলাম জানান, এই জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মামলা চলছে। রেলওয়ে কতৃপক্ষও মামলা করেছিল। কিন্ত তৎকালিন সময়ে রেলওয়ে কতৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকের পক্ষে জোড়ালো কোন ডকুমেন্ট আদালতকে দেওয়া হয়নি। কোন সরকারি জায়গা ও ডিসি খতিয়ানের জায়গা কোন ব্যাক্তির হতে পাড়ে না। মামলার নথি পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার ফাইল গুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।
আলাউদ্দিন মিয়া জানান, আমরা জানি এটি রেলওয়ে ও ডিসি অফিসের জায়গা, এই জায়গা কিভাবে ব্যাক্তির হয় তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শহিদ মিয়া, মুসলিম মিয়া, রফিক মিয়া জানান, সরকারের নিকট তাদের দাবি তাদের যেন এই জায়গায় থাকার জায়গা দেওয়া হয়। না হলে তারা খোলা আকাশের নিচে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা জজ আদলতের নাজির ফাহিমা আক্তার খানম ও মাধবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি মুজিবুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন।
এই বিষয়ে মাধবপুর উপজেলার কালিকাপুর ভুৃমি অফিসের তহশীলদার লোকমান মিয়া জানান, এই বিষয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
রেলওয়ের পাশে যে ঘরগুলো ছিল এই গুলোর মধ্যে অনেকগুলো ডিসি অফিসের জায়গা ও রেলের জায়গায় ছিল।
রেলওয়ে সার্ভেয়ার ফুরকান আলী জানান, তিনি এখানে নতুন জয়েন করেছেন। রেল লাইনের পাশের ৩০/৪০ ফুট জায়গা রেলওয়ে বিভাগের থাকে।
মাধবপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মুজিবুল ইসলাম জানান, তিনি শুধু আদালতের নির্দেশে সেখানে গিয়েছেন। এবং শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করেছেন।