এফ এম খন্দকার মায়া◾
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌরসভা প্রথম শ্রেণীভুক্ত হলেও প্রতিষ্ঠার দুই দশকের পরও পৌরসভায় উন্নয়নের হাহাকার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পৌরবাসী।
পৌরসভায় নেই কোনো বর্জ্য শোধনাগার, নেই নিরাপদ পানি ব্যবস্থা। ফলে শুকনো মৌসুমে বাসাবাড়িতে লেগে থাকে বিশুদ্ধ পানির হাহাকার।এবং পৌরসভার বর্জ্য সরাসরি বহমান খোয়াই নদীতে ফেলা হচ্ছে, যা পরিবেশ দূষণ এবং নদীর জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
চুনারুঘাট পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পুরাতন খোয়াই নদীতে বর্জ্য ফেলতে শুরু করেন। ১৮ বছরের ব্যবধানে এই নদী ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়।
বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের আন্দোলনে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে নদীটি পরিষ্কার করে বিডি ক্লিন বাংলাদেশ। এবং পুরাতন খোয়াই তার স্বাভাবিক রূপ ফিরিয়ে আনেন ব্যরিস্টার সুমন। তবে এর পরও স্থায়ী কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। সাবেক মেয়র সাইফুল আলম রুবেল পৌরসভার বর্জ্য ফেলার জন্য চলমান খোয়াই নদীর পশ্চিম পাকুড়িয়া ব্রিজের পাশে একটি অস্থায়ী স্থান নির্ধারণ করেন। কিন্তু এটি কোনো স্থায়ী সমাধান ছিল না।
পৌরসভার জরিপে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টন বর্জ্য তৈরি হয়, যার সবটাই খোয়াই নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দূষিত হয়ে দেশিয় মাছ নিধন হচ্ছে। এবং দূষিত পানি ব্যবহার করে এলাকাবাসী চর্মরোগ, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর চুনারুঘাট পৌরসভা গঠিত হয় এবং ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ০৮.১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। তবে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকারিভাবে নিরাপদ পানি ব্যবস্থার প্রকল্প চুড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন হয়নি চুনারুঘাট।
সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে বর্জ্য শোধনাগার ও নিরাপদ পানি ব্যবস্থা স্থাপন সম্ভব ছিল। তারা পৌরসভার সাবেক মেয়রদের অদূরদর্শিতাকেই এ সমস্যার জন্য দায়ী করছেন।
পৌরবাসীর দাবি, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণের মাধ্যমে রিসাইক্লিং করা বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন এবং পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি একটি স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশনও নির্মাণ করা প্রয়োজন।
সাবেক মেয়র সাইফুল আলম রুবেল বলেন, তৎকালীন সময়ে খোয়াই নদীর ব্রিজের পাশে অস্থায়ীভাবে বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
চুনারুঘাট পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, এসকল প্রকল্প স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে চুনারুঘাট পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। নদীতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’