➖
প্রতিবেদক
সাইফুল ইসলান, দোহা, কাতার◾
জীবিকার তাগিদে বাড়ি ঘর মা বাবা আত্বীয়স্বজন ছেড়ে দূর প্রবাসে পাড়ি জমালেও সেখানে এসেও সংশয় কাটছে না অনেক প্রবাসীদের। একটু সুখের আশায় সহায়সম্বল বিক্রি করে, লাখ লাখ টাকা খরচ করে এসেও দালালের খপ্পরে পড়ছেন অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশী। কেও কেও আবার দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে আছেন বেকার। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও।
তাই বাংলাদেশ থেকে কেউ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আসতে চাইলে, ভিসা নেওয়ার পূর্বে যাচাই করে আসবেন। দেশের প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে পাড়া মহল্লায় অসংখ্য লোক প্রবাসে আছেন, আসতে চাইলে আশপাশের বা নিজেদের লোকের সাথে আগে পরামর্শ করে আসুন। কারণ দালালরা বলে একটা করে আরেকটা। বলবে কোম্পানী ভিসা, লোক আসলে বলবে ফ্রী ভিসা, অথচ মুলত ফ্রী কোনও ভিসাই নাই। এছাড়াও মালিকের অনুমতি নিয়ে অন্য মালিকের কাজ করা, যা কাতারের আইনে নিষিদ্ধ। দালালরা বলবে ভাল বেতন, কোম্পানী ভালো, কাতার আসলে দেখবেন কোম্পানী গ্রহন করছে না, কিংবা লোক দরকার নাই। এমন অহরহ ঘটনা ঘটতেছে। এমনও হইছে এয়ারপোর্টে এসে লোক ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছে, কেউ রিচিভ করতেছে না। আর ভিসার টাকার কথা কি বলব যেখানে নরমালি ভিসা কিনে আসলে ২ লাখ ৬০/৭০ হাজার টাকায় আসা যায়, সেখানে লোক ৪/৫ লাখ টাকা দিয়ে আসতেছেন। দালাল চক্র থেকে সাবধান। ওদের কথায় প্রতারিত না হয়ে, যাচাই বাছাই করে আসুন। সতর্ক হোন।
কেননা নিয়মনীতি মেনে দালালরা কৌশলে ফ্রি ভিসাকে কন্ট্রাক্ট ভিসা বলে চালিয়ে দিলেও কাতারে এসে কাজ পাচ্ছেন না অনেকে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের দালালের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিরাও। চক্রটির একটি অংশ বাংলাদেশে ভিসা বিক্রি করে, আরেকটি দুবাই থেকে ভিসা সংগ্রহ করে এবং অন্যটি বেকার অসহায় শ্রমিকদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে সর্বস্বান্ত করে। প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে অনেক শ্রমিক দেশে ফিরলেও টনক নড়ছে না বাংলাদেশের বিদেশে গমনইচ্ছুকদের।
ভুক্তভোগী চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার সজিব আহম্মদ বলেন, দুবাই এসেছি আর্মেনিয়া ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে। এখানে আসতে ৪ লাখ টাকার ওপর খরচ হয়েছে। গত ৪ মাস বেকার বসে আছি।
আরেক ভুক্তভোগী জানান, ক্লিনার কাজের ভালো ভিসা আছে বলে আমাদেরকে কাতারে পাঠায়, দেশে থাকতে টাকা নেয়। আমাদের বলেছিল, কাতার আসলে তার লোকজন আছে, আমাদের থাকা খাওয়া সহ সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেবে অথচ এখানে এসে আমরা একবারে অসহায় হয়ে গেছি।
আরেকজন ভোক্তভোগী আকুতি করে ফেসবুকে লিখেছেন, বাবার স্বপ্ন পূরনের জন্য ইউরোপ যাবো বলে সঞ্চিত টাকা জুয়েল তালুকদার নামের এক দালালকে দেই। সেই জুয়েল দালাল আমাকে দুবাই এনে সে আমার টাকা নিয়ে বাড়ি চলে যায়। এমনকি কেউ নেই যে আমার টাকাগুলো উদ্ধার করে দেবে! আমার মত কয়েকজনকে সে এভাবে এনে বিপদে ফেলেছে।
এছাড়াও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পাসপোর্টে থাকা ভিসায় উল্লেখিত কফিল বা কোম্পানি তাদের কোন খবর নিচ্ছে না। এমনকি অনেককে এয়ারপোর্ট থেকেই বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে অন্য সাপ্লাইয়ারের কাছে।
জনশক্তি রফতানিতে খরচ ও দালালের দৌরাত্ম্য কমানো এবং প্রতিশ্রুত কোম্পানিতে কাজ ও ন্যায্য বেতন নিশ্চিতে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
লিখেছেনঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম
দোহা, কাতার প্রবাসী
দ.ক.সিআর.২৪