বেগম ফয়জুন্নেছা তামশি◾
বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের একটি অমূল্য সম্পর্ক, যা আমাদের মানসিক, আবেগগত এবং সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। সঠিক বন্ধুরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপে শক্তি জোগায় এবং আমরা একে অপরের জীবনে সুখের কারণ হয়ে উঠি।
ভাল বন্ধুত্ব মানে কী?
ভাল বন্ধুত্ব হল এমন এক সম্পর্ক যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, সহানুভূতি এবং বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এখানে কেউ কারো বৈশিষ্ট্য বা ভুল নিয়ে বিচারে বসে না বরং অনুভূতিকে প্রাধান্য দেয়। ভাল বন্ধুরা একে অপরের প্রতি ওপেন থাকে এবং মনের ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়। এর মানে হল, আপনি এমন একজনকে খুঁজছেন, যার কাছে মনের কথা নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারবেন এবং যিনি আপনার পাশে থাকবে, যখন আপনি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।
একজন ভাল বন্ধু শুধুমাত্র আনন্দের সঙ্গী নয়, বরং একটা মানসিক সাপোর্ট সিস্টেম হিসাবে কাজ করে। এই ধরনের বন্ধুত্ব মানসিক শান্তি, সমর্থন, সুখ ও স্বস্তি এনে দেয়।
কেন কোনো বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় না? সব বন্ধুত্বই কি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা উচিত?
সব সম্পর্কের মতই বন্ধুত্বও কখনো কখনো আর কাজ করে না। এর কারণ হতে পারে বিভিন্ন চিন্তাগত, মূল্যবোধ সংক্রান্ত অমিল, সময়ের অভাব, ভুল বোঝাবুঝি, অথবা পারস্পরিক শ্রদ্ধার অভাব। কখনো কখনো বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, সব বন্ধুত্বই কি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা প্রয়োজন? এর উত্তর হল, না। যদি একটি বন্ধুত্ব টক্সিক হয় বা আপনাকে মানসিকভাবে কষ্ট দেয়, তবে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসাই শ্রেয়। সব সম্পর্ক আমাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এমন নয়, তাই কখনো কখনো সম্পর্কের শেষটাই সঠিক সমাধান হতে পারে।
কখন বন্ধুত্বের সমাপ্তি টানবেন?
একটি বন্ধুত্ব থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত কঠিন হলেও কখনো কখনো জরুরি হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যদি সম্পর্ক মানসিক বা আবেগগত ক্ষতি করে।
যদি কোনো বন্ধু বার বার আপনাকে আঘাত করে, মিথ্যা বলে, কিংবা আপনার অনুভূতি এবং সীমারেখাকে অসম্মান করে, তবে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিতে থাকবে। আপনিও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগবেন।
এছাড়া, সম্পর্ক টক্সিক হয়ে উঠলে বা যদি এমন হয় আপনি একতরফাভাবে সব চেষ্টা করছেন, তাহলে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে বন্ধুত্ব ছাড়ার কথা ভাবতে পারেন।
বন্ধুত্বের ভিত্তি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক সমর্থন। যদি সম্পর্ক আপনাকে মানসিক শান্তি না এনে দেয় বরং আপনাকে হতাশ করে এবং আপনার ব্যক্তিগত বা পেশাগত উন্নতিতে বাধা দেয়, তবে সেই সম্পর্ক থেকে দূরে সরে আসাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
একজন ভাল বন্ধু আপনাকে উন্নতি করতে সাহায্য করবে, কিন্তু নেতিবাচক বন্ধুত্ব মানসিকভাবে ক্লান্ত করে দেয় এবং জীবনকে কঠিন করে তোলে।
নতুন বন্ধু কীভাবে তৈরি করবেন?
নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে আপনাকে হতে হবে খোলামেলা, সৎ এবং অন্যের প্রতি আগ্রহী। নতুন বন্ধু বানানোর ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রয়োজন হয় মনের দরজা খোলা রাখা। বিভিন্ন সামাজিক ইভেন্ট, কর্মস্থল বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ আসে। যখন আপনি কোনো নতুন মানুষের সাথে দেখা করেন, তখন তার আগ্রহ বা পছন্দের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। যদি আপনাদের মধ্যে মিল থাকে, তবে সম্পর্ক সহজে গড়ে উঠবে।
বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ছোট ছোট বিষয় যেমন সময় দেওয়া, আন্তরিকতা দেখানো এবং অন্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে ছোট ছোট আলাপচারিতার মাধ্যমে সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তুলুন।
কীভাবে বুঝবেন এই মানুষটি আপনার ভাল বন্ধু হওয়ার উপযোগী?
একজন ভাল বন্ধু হওয়ার উপযোগী মানুষকে চেনার জন্য কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। প্রথমত, সে কি আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল এবং সৎ? একজন ভাল বন্ধু সবসময় আপনার মঙ্গল চাইবে এবং সে কখনোই আপনার ক্ষতি করবে না। সে কি আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে? আপনি যদি বিপদে পড়েন, সে কি আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত?
একজন ভাল বন্ধু পাওয়া নির্ভর করে ওই ব্যক্তির আচরণ, আপনার প্রতি মনোযোগ এবং তার চিন্তাভাবনা। যদি তিনি আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দেয়, তবে সেই ব্যক্তি আপনার ভাল বন্ধু হওয়ার উপযোগী হতে পারে।
যেভাবে পুরোনো বন্ধুর সাথে সম্পর্ক দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখবেন
পুরোনো বন্ধুত্বকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে হলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা খুবই জরুরি। সম্পর্কের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং সৎভাবে আলাপ চালিয়ে যেতে হবে। একে অপরের পরিবর্তন মেনে নিতে হবে এবং সম্পর্কটি উভয়ের জন্যই যে গুরুত্বপূর্ণ, তা উপলব্ধি করতে হবে।
যেভাবে নিজে একজন অসাধারণ বন্ধু হয়ে উঠবেন
অসাধারণ বন্ধু হতে হলে ধৈর্য, সহানুভূতি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা থাকতে হবে। আপনাকে এমন একজন হতে হবে, যিনি প্রতিটি পরিস্থিতিতে বন্ধুর পাশে দাঁড়াবেন। ভাল বন্ধুত্বের জন্য আন্তরিকতা এবং বিশ্বাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও বন্ধুর সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যত্নশীল হতে হবে এবং তার জীবনের উন্নতিতে সহায়তা করতে হবে। নিজেকে সবসময় উন্নত করার চেষ্টা করা প্রয়োজন, যাতে সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল থাকা যায়।
বন্ধুত্ব জীবনের এক অমূল্য উপহার, যা মানসিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি এনে দেয়। নতুন বন্ধু তৈরি করা যেমন জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা আর সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়, তেমনি পুরোনো বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তরিকতা, সমর্থন এবং যত্নশীলতা বন্ধুত্বের মূল ভিত্তি, যা আমাদের জীবনে স্থায়ী সুখ এবং পরিপূর্ণতা নিয়ে আসে।
দ.ক.বন্ধু.বন্ধুত্ব.সম্পর্ক