কালনেত্র প্রতিবেদক◾
নানা অজুহাতে প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টিকে কারণ হিসেবে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। সবজি থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই দাম বেড়েছে। কিছুতেই স্বস্তি ফিরছে না লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে।
শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। ওঠানামা করছে কাঁচামরিচের দাম। তবে ডিম ও মুরগির দাম বাজার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। সুখবর নেই চালের বাজারে।
তাছাড়া পেঁয়াজ, আলু, মাছ, মাংস, চিনি, মসলাসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। কিন্তু এই সময়ে সাধারণ মানুষের আয় তেমনভাবে বাড়েনি। এর ফলে আয়ের সঙ্গে বাড়তি ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না বেশির ভাগ মানুষ।
আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে দেশে উৎপাদিত পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য মূলত বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, সরকারের দায়িত্বরত বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর জোরালো ভূমিকা না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁরা নানা অজুহাতে যখন তখন পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছেন।
বিশেষ করে স্বল্প আয়ের এবং মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ছে, তা আর কমছে না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ক্রমেই তা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
বাজারে প্রতিকেজি গোল বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। পটল, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকার কাছাকাছি। একইভাবে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বরবটি, করলা ও লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
তবে, কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই ক্রেতাদের, কাঁচা মরিচের দামের কোন ঠিক নেই। কোথাও ২০০ আবার কোথাও ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দিন চার-পাঁচ আগেও কিনেছি ১৬০ টাকায়।
প্রতি কেজি আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি পেঁয়াজের কেজি ৯০ থেকে ১০০ এবং ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ আগের মতোই ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও দেশি রসুন ২০০ থেকে ২১০ এবং আমদানি রসুন ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নিয়ন্ত্রণে নেই চালের বাজার। প্রতিকেজি মোটা চাল ৫০ থেকে ৫৫, মাঝারি ৫৫ থেকে ৬০ এবং মানভেদে সরু চাল ৬৪ থেকে ৭৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম ওঠা-নামা করলেও ব্যতিক্রম মাছের ক্ষেত্রে। এই বাজার দীর্ঘ দিন থেকে চড়াই রয়ে গেছে। বাজারে মাছের দাম কমার যেন কোনো নামই নেই। মূলত ‘বাজার চড়া’ এই গতানুগতিক বুলি থেকে বের হতে পারছে না মাছের বাজার।
বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়, প্রতি কেজি পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, রুই প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায়, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, শিং মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, সরপুঁটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, রুপচাঁদা প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি রপ্তানি চক্করে সমালোচনায় থাকা ইলিশ মাছও অতিরিক্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাজারে সব ধরনের মাছের দামই বাড়তি যাচ্ছে।
দ.ক.সিআর-২৪