আসাদ ঠাকুর◾ দেশটা আমাদের, নতুন শাসকের নীতির সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। সময় ও ইতিহাস তার নিজের ধারা ঠিক করবে। তবে যে জাতি ইতিহাস ভুলে যায় সে তার ভবিষ্যত গন্তব্য নির্ধারণে বার বার ভুল করে। ভুল করতে করতে একদিন হয়তো ঠিক হবে।
এক জোয়ারের দাগ আরেক জোয়ার ঢেকে দেয়। এক সরকার যায় আরেক সরকার আসে। দেশ ধারণ করে বহু বিচিত্র শাসক। বিগত ১৫ বছর একধারার শাসন চলেছে। সেই শাসন কতটা ভালো ছিল অথবা খারাপ ছিল বা তুলনামূলক কতটা ভালো বা মন্দ ছিল সেটা নিয়েও চুলচেড়া বিশ্লেষণ করবে, এটাই স্বাভাবিক, আর এর মাধ্যমেই একটা দেশ ও জাতির ইতিহাস গড়ে উঠে।
আমি বহু আগে বলেছিলাম, দেশে যেদিন কোন সরকারের কট্টর সমর্থক ২৫% এর নীচে নেমে যায় তখন সেই সরকারের পক্ষে আমাদের মতো দেশগুলোতে টিকে থাকা সম্ভব নয়; সম্ভবত: শেখ হাসিনা সরকারের সমর্থক সেই পর্যায়ে নেমে এসেছিল।
প্রথাগত ভাবেই বাংলাদেশ নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রক্রিয়াটা রেফারেন্সিভ এবং জনগণের সাথে সম্পর্কটা অপ্রেসিভ। একটা জাতি একটানা ১৫ বছর একটা অপ্রেশন হজম করেছে কিন্তু নতুন প্রজন্ম এটা সহ্য করতে পারেনি; যার ফলে সরকারের উন্নয়ন জনগণকে স্পর্শ করতে ব্যার্থ হয়। যদি আরও অনেক জাতিয় ও আন্তর্জাতিক কারণ আছে।
খুব সংক্ষেপে একটা বিশ্লেষণ যখন লিখছি তখন যশোরের পাঁচ তারকা হোটেলে ঘুমন্ত মানুষদের লাশ চোখে ভেসে উঠছে। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ থাকতে পারে কিন্তু যশোরের অর্থনীতির অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান কেন এভাবে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হলো?এরও একটা বৈজ্ঞানিক কারণ আছে, সেটা ব্যাখ্যা করা যায় ’অ্যাগোনি’ থিওরী দিয়ে। একটা সমাজে বিশ্বাস ও কর্মের দান্দ্বিকতা ও জৈবিক/যৌনতার অবদমন থেকে সৃষ্ট হতাশা দিয়ে সৃষ্ট জিঘাংসা এর মূল কারণ। আমাদের মতো পারভারটেড সমাজে এটাই হতো বাস্তব।
গতকাল দেশের নামকরা একটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুুয়া আমার ভাগনা হৈহুল্লোর করে বাড়ি ফিরে উষ্মা প্রকাশ করে বললো, ’মামা কাজটা মনে হয় ঠিক হয়নি’, আমি বিদেশ চলে যাব"। এতদিন আমি যাকে এই আন্দোলনের ভেতরের কাহিনী ও প্রাপ্তির অসারতা নিয়ে একটা কথাও শোনাতে পারিনি সেই অসারতার বিষয়টি ভাগনা বুঝতে পারলো এত সহজে, কারণ সে এতদিন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। এখন ঘোর কেটে গেছে। সমবেত শক্তির বৈশিষ্ট ভাগনাকে বিব্রত করেছে। এই সমবেত শক্তির আচরণের সাথে চলমান পুঁজিবাদী অর্থনীতির বৈশিষ্ট খাপখায়না।
আগামী বাংলাদেশ কি কর্পোরেট পুঁজির পৃথিবীকে স্বাগত: জানাতে পারবে, না ক্ষুদ্রঋণের চক্রে আটকে থাকবে তার উপর নির্ভর করছে আমার ভাগনার মতো তরুনেরা দেশে থাকবে কি থাকবে না। নাকি মেধাবী শব্দটার ভার তাকে বিব্রত করে যাবে চীরদিন। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আগামী দিনের শাসকদের।
আসাদ ঠাকুর
কবি, লেখক ও সাংবাদিক
কে/সিআর/২৪