শুধু স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরে ভাত খাওয়ার এই ‘প্যাকেজ’ চালু করেছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের একজন হোটেল ব্যবসায়ী।
আহমাদ ইশতিয়াকঃ গত ৭ বছর ধরে বিপ্লব সরকার পাঁচ টাকায় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার খাওয়াচ্ছেন।
পাঁচ টাকার প্যাকেজের কথা জিজ্ঞেস করতেই বিপ্লব সরকার নামের সেই হোটেল ব্যবসায়ী বললেন, 'গ্রামের অধিকাংশ বাচ্চাই বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসে না। অনেকেরই বেশী টাকা দিয়ে হোটেল থেকে দুপুরের খাবার কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্যও নেই। তাই তারা স্কুলে এসে টিফিনের সময় আশপাশের দোকান থেকে মুখরোচক সস্তা কিছু একটা হয়তো কিনে খায়। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্যও কিন্তু ক্ষতিকর। অথচ দুপুরে এক প্লেট ভাত খেতে পারলে এই কোমলমতি বাচ্চাদের শরীরটা ভালো থাকে।' এই চিন্তা থেকেই বিপ্লব সরকার সাত বছর আগে এই প্যাকেজ চালু করেন।
বিপ্লব সরকার বললেন, তিনি বাচ্চাদের কয়েকটি শর্তে খেতে দেন। তাঁর এই প্যাকেজ খেতে হলে অবশ্যই স্কুল ড্রেস পরে আসতে হবে। আর খাবার আগে বা পরে বাইরের দোকানে অন্য কোনো মুখরোচক খাবার খাওয়া যাবে না। বিপ্লব সরকার দেখেছেন বেশির ভাগ বাচ্চাই এক প্লেটের বেশি ভাত খেতে পারে না। তিনি ভাতের সঙ্গে সবজি আর ডাল দিয়ে একটি প্যাকেজ তৈরি করেছেন। খাবার সময় তিনি খেয়াল করেন, কোনো বাচ্চা যেন সবজি নষ্ট না করে।
বিপ্লব বলেন, 'শরীরের জন্য সবজির বড় প্রয়োজন। আমি তাই সবজি খেতে বাধ্য করি। টমেটোর মৌসুমে টমেটোর সালাদ খেতে বাধ্য করি। টোটাল প্যাকেজটাই ৫ টাকা। তবে পাশাপাশি খেতে বসে কোনো বাচ্চা যদি বেশি টাকা দিয়ে মুরগির মাংস খেতে চায় তাহলে আমি পাশের বাচ্চাটাকেও ছোট এক টুকরা মুরগির মাংস ও একটু ঝোল দিই যেন সে বাচ্চাটার মন খারাপ না হয়।
বিপ্লব সরকার মনের আনন্দে এটা করছেন বলে জানান। সেবার মানসিকতা থেকে করছেন। কারণ, তিনি পরিবারের আর্থিক অনটনের কারনে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি! লেখাপড়া না করে তিনি কী যে ভুল করেছেন এখন তিনি বুঝতে পারেন। এ জন্য যে বাচ্চারা লেখাপড়া শিখছে, তারা যেন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে, তার জন্য তিনি তাঁর সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারছেন, সহযোগিতা করছেন।
বিপ্লব সরকারের মতো মানুষ এদেশে আছে বলেই দেশটা এখনো এতো সুন্দর।
এমন মহানুভবতা কজনই বা দেখাতে পারে!
কে সিআর/২৪